SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা - খেলাধুলার দুর্ঘটনা | NCTB BOOK

১. সন্ধিচ্যুতি : শরীরের একটি অস্থি/হাড় অন্য হাড়ের সাথে যেখানে মিলিত হয়েছে ঐ স্থানকে সন্ধিস্থান বলে। অর্থাৎ দুই বা ততোধিক হাড়ের সংযোগ স্থানের নাম সন্ধি। এই সন্ধির স্থান থেকে যদি হাড়ের বিচ্যুতি ঘটে তাকে সন্ধিচ্যুতি বলে। কাঁধ, কনুই, কব্জি, বৃদ্ধাঙ্গুল, নিম্ন চোয়াল, হাঁটু ও পায়ের গোড়ালি ইত্যাদির সন্ধিস্থানের সন্ধিচ্যুতি ঘটতে পারে। অনেক সময় সন্ধিচ্যুতি ও হাড়ভাঙ্গা একই সময়ে হয়ে থাকে।
 

সন্ধিচ্যুতির লক্ষণ : ১. সন্ধিস্থান ফুলে যাওয়া, ২. সন্ধিস্থানে ব্যথা অনুভব করা, ৩. সন্ধিস্থান নড়াচড়া করানো যায় না, ৪. সন্ধিস্থানের হাড় সরে গিয়ে বিকৃত রূপ ধারণ করা।
 

সন্ধিচ্যুতির প্রাথমিক প্ৰতিবিধান
১. আহত অঙ্গ যথাসম্ভব আরামদায়ক অবস্থায় রাখতে হবে।
২. আহত অঙ্গ নড়াচড়া করা যাবে না।
৩. সংযোগ বিচ্যুতি অস্থি দুটিকে সংযোগ দিতে হবে বা সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
৪. সন্ধিচ্যুতর স্থানে ভেজা কাপড় বা বরফ লাগাতে হবে।
৫. প্রয়োজনে হাড়ভাঙ্গার ব্যান্ডেজ ব্যবহার করবে।
৬. রোগীর শক লাগলে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. হাড়ভাঙ্গার সন্দেহ হলে হাড়ভাঙ্গার ব্যান্ডেজ করতে হবে।
৮. রোগীকে যথাসম্ভব দ্রুত ডাক্তারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। 

 

২. মচকানো ও হাড়ভাঙ্গা
 

২.১ অস্থি বা হাড়ের জোড়া লাগানোর স্থানে শক্ত লিগামেন্ট হাড়ের জোড়াকে একসাথে রাখে। কোনো কারণে যদি এই লিগামেন্ট টানটান হয় কিংবা ছিঁড়ে যায় তাহলে হাড়ের সন্ধিস্থলে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং আহত স্থানের চারপাশ ফুলে ওঠে। একে অস্থিসন্ধির মচকানো বলে। খেলাধুলা বা ব্যায়ামের সময় মচকালে স্থানটিকে সবচেয়ে আরামদায়ক অবস্থানে রাখতে হবে। এরপর তুলা বেশ পুরু করে আহত স্থানের উপরে ও নিচে দিয়ে শক্ত করে ব্যান্ডেজ করতে হবে।
 

২.২ হাড়ভাঙ্গা : শরীরের কোনো হাড় ভেঙ্গে গেলে একে হাড় ভাঙ্গা বা Fracture বলে। হাড়ভাঙ্গা নানা প্রকার হতে পারে। যেমন- ক. সাধারণ হাড়ভাঙ্গা খ. কম্পাউন্ড হাড়ভাঙ্গা গ. জটিল হাড়ভাঙ্গা।
 

২.২.১ সাধারণ হাড়ভাঙ্গা : এই হাড়ভাঙ্গা শরীরের অভ্যন্তরে ঘটে। প্রথমে হাড়ের দুই মাথা সোজা করে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করতে হবে। তারপরে স্প্লিন্ট দিয়ে বেঁধে অনড় করতে হবে।
 

২.২.২ কম্পাউন্ড ফ্রাকচার : একে উন্মুক্ত ফ্রাকচারও বলে। কারণ এই ফ্রাকচারের ভাঙ্গাহাড় চামড়া ভেদ করে শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসে। ভাঙ্গাহাড় যতটা সম্ভব সোজা করে শক্তভাবে ব্যান্ডেজ করতে হবে যেন ঐ স্থান অনড় থাকে।
 

২.২.৩ কমপ্লিকেটেড ফ্রাকচার : এই ফ্রাকচারের ভাঙ্গা হাড়ের প্রান্ত শরীরের কোনো গুরুত্বপূর্ণ দেহ যথা- কিডনি, লিভার, ফুসফুস বা কোনো রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এছাড়াও আরও কয়েক প্রকার হাড়ভাঙ্গা রয়েছে, যেমন— S. কমিনিউটেড- হাড় ভেঙ্গে কয়েক টুকরা হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়।
 

২. ইমপ্যাক্টেড— যেখানে হাড়ের ভাঙ্গা প্রান্তদ্বয় পরস্পর সংবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
 

৩. গ্রিনস্টিক— বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে হাড় না ভেঙ্গে কেবল চির খেয়ে যায়। কচি নিম ডাল খানিকটা দুমড়ে ছেড়ে দিলে যেমন হয় ৷
 

হাড় ভেঙ্গে গেলে করণীয়-
১. সাথে সাথে রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। কারণ রোগীকে তৎক্ষণাৎ স্থানান্তর করা সম্ভব হয় না ।
২. আঘাতপ্রাপ্ত স্থানকে অনড় করতে হবে যাতে নড়াচড়া করতে না পারে।
৩. স্প্লিন্ট ব্যবহার করে আহত অঙ্গ অনড় করতে হবে।
৪. রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
 

৩. লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া : লিগামেন্ট জয়েন্টের সাথে সম্পৃক্ত। জয়েন্টে লিগামেন্ট, টেনডন ও মেমব্রেন দ্বারা বেষ্টিত। চ্যাপ্টাজাতীয় বন্ধনীর নাম লিগামেন্ট। লিগামেন্ট দুই হাড়ের নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। এদের উপরে আছে টিস্যুর বন্ধনী ফলে সংযোগস্থানটি আরও মজবুত করেছে। কখনো যদি অসমান্তরাল জায়গায় পা পড়ে, বাস থেকে নামার সময় জয়েন্টে ঝাঁকি লাগে বা দৌড়ের সময় জয়েন্টে কোনো কারণে আঘাত লাগলে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। আহত স্থানটি ফুলে যায় ও ব্যথা অনুভূত হয়। ঐ অঙ্গ নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়। সাথে সাথে বরফ লাগাতে হবে এবং বিশ্রামে থাকতে হবে। প্রয়োজন হলে ডাক্তারের কাছে পাঠাতে হবে।

Content added By